মহারাজা তোমারে সেলাম।


ছোটবেলায় তেমন সিনেমা দেখতাম না। বিশেষ করে পুরনো দিনের ছবি। সেই সাদা-কালো, মারামারি নেই, ভারী ভারী মানে– কিছুই মানে বুঝলাম না! তবে একদিন বাবা বেশ জোর করেই বললো, "এই সিনেমাটা দেখ!" অগত্যা  আমাকে দেখতে হলো। তাছাড়া পড়াশোনা ছেড়ে অন্য কাজ করতে কার না ভালো লাগে! তার উপর স্বয়ং বাবা বলছে!
সিনেমাটা দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল, যা বোঝানো যায় না- এক দুষ্টু মন্ত্রী তার জাদুকর আর এক ভালো রাজা ! এক রূপকথা!  কিন্তু কিছু বছর পর বুঝতে পারি, রূপকথার আবরণ দিয়ে এক চরম সত্যকে তুলে ধরেছে! এক শাশ্বত সত্য! সিনেমাটির নাম 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'।
           সৌমেন্দু রায় 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' -এর ক্ষেত্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই ছবিতে দুটো রাজা। ভালো এবং খারাপ। লাইটেও সেই ফারাকটা চাই। শুন্ডির রাজার জন্য শ্যাডোলেস লাইট করেছিলাম, যেটা তখন খুব সহজ ছিল না।

এক প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, সত্যজিৎ রায় লন্ডনের এক সিনেমা হলে 'বাইসাইকেল থিফ' দেখে। "ওই ছবি দেখেই আমি টের পেলাম শুধু অপেশাদার অভিনেতা দিয়ে পরিচালকই ঘটাতে পারেন! স্থির করলাম নিওরিয়ালিস্টিক মেথডে আমি পথের পাঁচালী করব," বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
       নোবেলজয়ী সাহিত্যিক সল বেলো, মার্কিন লেখক। যিনি বাংলা ভাষাটাই জানেন না, তার লেখা 'হারজগ' উপন্যাসেও ঢুকে এলো 'পথের পাঁচালী' সিনেমার কথা।

'আগন্তুক' সিনেমায় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে উৎপল দত্তের সিনটা! আমার মনে হয়, সত্যজিৎ রায় কেও সেই একই প্রশ্ন করলে, উত্তরটা সেই একই দেবে।

"আপনি কেন বুঝতে পারছেন না? আমি নিজে জংলি নই! এটা আমার পরম আক্ষেপের বিষয়! যে আমি জংলি নই! আমি আলতামিরা গুহাবাসীর মতো  বাইসান আঁকতে পারিনা। কিন্তু উপায় কী বলুন! ঘর ছাড়ার আগেই আমার মধ্যে ঢুকে গেছে  শেক্সপিয়ার, বঙ্কিম, মাইকেল, ফ্রয়েড, রবীন্দ্রনাথ!"

'আগন্তুক' -এর শেষ দৃশ্যে খুদে নাতিটিকে মনমোহন মিত্তির মনে করিয়েছেন, 'জীবনে কি হবে না বলে আমায় কথা দিয়েছে?' শিশুটি বলে কূপমণ্ডূক। তার শেষ ছবির শেষ দৃশ্যে হয়তো বলে গেছে হে বাঙালি কূপমণ্ডূক হয়ে থেকো না!

তথ্য সূত্র -   আনন্দবাজার পত্রিকা।

Comments