"টিভি দেখবো না বই পড়বো।"
-: টিভি দেখবো না বই পড়বো :-
____________________________
টিউশনে পদার্থবিদ্যার মহাকর্ষ অধ্যায়টি পড়ে যখন মস্তিষ্ক বিকল হবার জোগাড় হয়েছে, ভাবলাম বাড়ি গিয়ে মস্তিষ্কে ধোঁয়া দেব। এই ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরার পথে, হঠাৎ নিজের অজান্তে একই শব্দ একই মুহূর্তে কানের মধ্যে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলো, “কিরনমালা.... কি-ই-ই-রন মালা-আ-আআ...”। ঠিক তখনই ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল, ‘F=GMm/(কিরনমালা)²’। বাড়ি ফিরে চোখ পরল টিভিতে, দেখলাম 'ISRO' স্বল্প খরচে মহাকাশযান মঙ্গলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে এবং সেটি দেখে আমার বিকলাঙ্গ মস্তিষ্কে সচ্ছন্দে মহাকর্ষ অধ্যায়ের উপর আগ্রহের উদয় হয়েছিল।
ভেবে দেখুন, এই সংবাদটি পাওয়ার পর যদি আমি নিদ্রামগ্ন হতাম, তাহলে আমার কোনো লাভ হতো না। কিন্তু, আমি যখন সংবাদটি দেখে মহাকর্ষ অধ্যায়টি আরো একবার পড়লাম তখন আমার আগ্রহের মান শতগুণে বৃদ্ধি পেল। আমরা টিভি-তে ভালো-মন্দ দুই দেখি এবং সেই 'ভাল-মন্দ'-র নিয়ন্ত্রণ করে টিভি চ্যানেলের নিয়ন্ত্রনকারীরা। কিন্তু, আমরা যখন বই পড়ি, সেটির উপর নিয়ন্ত্রণ করি স্বয়ং আমরাই। তাছাড়া, বই আমাদের সাহিত্যবোধ, রসবোধ, মানসিক চেতনা প্রভৃতি বৃদ্ধি করে। ইতিহাসের পাতায় আমরা পড়েছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতো লিপির মাধ্যমে এবং সেই গুলি একসঙ্গে লিপিবদ্ধ করে সৃষ্টি হল পুস্তকের, যা চলিত ভাষায় 'বই'। সেই বই ছেড়ে যদি আমরা সারাদিন টিভি-তে মগ্ন হই, তবে আমরা পরস্পরের মধ্যে নিজের মনের ভাব, আবেগ প্রকাশ করতে পারতাম কি?
আমরা নিত্যদিন টিভির পর্দায় কিংবা বইয়ের পাতায় জাতিভেদ, কুসংস্কার, বিকৃত-মানসিকতা ইত্যাদি বিষয়ক দেখে থাকি বা পড়ে থাকি। এটার জন্য কি আমরা টেলিভিশন-এর আবিষ্কার কর্তা বা বইয়ের লেখকদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারি? “আসলে দোষটা আবিষ্কার কর্তা বা বইয়ের লেখকদের নয়, দোষটা আমাদের মত ব্যবহারকারীদের...”।
Comments
Post a Comment