তুমিও পারবে নতুন ভাবে।

    (bengali magazine online reading free./বাংলা ম্যাগাজিন। Bengali poem,                    bengali prose, Bengali article)

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সৌমদীপ। কৈশোর  থেকে এখন যৌবনে পদার্পণ করেছে। পাড়া, স্কুল,কলেজের বন্ধুদের নয়নের মণি। সৌম ছোট থেকেই সব কিছুতে  মোটামুটি পারদর্শী, তাই পড়াশোনা ঠিক মতো চলেই যায়। সৌম ঠান্ডা মাথার ছেলে সব কাজ ভেবেচিন্তে করে, সবাইকে আপন করে নিতে ভালোবাসে, কিন্তু বেইমানি টা যেন একদম সহ্য করতে পারে না। তাই কারোর সাথে মেশার আগে ভেবেচিন্তে মেশে। সৌমর প্রায় সব বন্ধুই প্রেম করে করে নাচে, আবার সেই প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে কেউ নেশায় মেতে ওঠে। সৌমকে অনেক বন্ধুই খোরাক করে প্রেম করে না বলে, সৌমর আবার এসব পোষায় না। ক্লাস টেন-এ একবার একজনকে পছন্দ হয়েছিল, কিন্তু বলতে গিয়ে অপমান হয়েছিলো। তাই পরবর্তীকালে এদিকে আর এগোয়নি। তাই বন্ধুদের কথায় খুব একটা কান দেয় না।

কিন্তু, এরই মাঝে ঘটল বিপদ। সৌমর বাবা এক গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে ঘরে বসে গেল , আস্তে আস্তে যা সঞ্চয় ছিল তাও ফুরোতে চললো। এবার সৌমকে সংসারের হাল ধরতে হবে। কিন্তু সৌম পড়া ছাড়তে রাজি নয়,   আবার কাজ না করলেও হবে না। তাই সে কাজটাকেই আগে রাখল, পড়াটাকে পরে। এইসময় পাড়ার এক দাদার থেকে একটা কল সেন্টারে চাকরি পেয়ে গেল। মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। ক'দিন পর অফিসের এক বান্ধবীর উপর কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়লো। কিন্তু, ভালোবাসার প্রস্তাব দেওয়ার সাহসটা যেন পেত না। একদিন অফিসের এক পার্টিতে মেয়েটি তাকে প্রস্তাব দিল আর সৌম যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল।

বেশ ভালোভাবেই ওদের সম্পর্ক এগোচ্ছিলো। সৌম বেশ খুশিই ছিল, সে যেমন চেয়েছিল তেমন পেয়েছে ঐশীকে। এইভাবে ওদের সম্পর্ক এক বছর হয়ে গেল। সৌমর তখন সব যেন ঐশীকে ঘিরে। ওকে পেয়ে যেন সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়েছিল। সৌম প্রায় সমস্ত দিক থেকেই সবাইকে খুশি রাখছিলো, কিন্তু কোথাও যেন একটা খামতি রয়ে গিয়েছিল। তাই হয়তো, ঐশীর আর সৌমকে ভালো লাগছিল না। সৌম বুঝতে পারত, ঐশী সৌমকে আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছে না। একদিন যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল ওদের সম্পর্কে; ঐশী আর সম্পর্ক রাখতে চায় না সৌমর সঙ্গে। সৌমর এই অল্প মাইনের চাকরি তারপর বাবা মাকে দেখা, অনেক বিষয়ে ঐশীর মতামতে না করা এসব আর ঐশীর ভালো লাগছিল না। সে আরেক জনের সঙ্গে সম্পর্ক জড়িয়ে পরেছে। এসব কথা সৌম বিশ্বাস করতে চায় না। সে ঐশীকে প্রাণপণ দিয়ে বোঝায়, কিন্তু কোন কথাই ঐশী মানলো না। এটা হওয়ার পর সৌমর পায়ের তলা দিয়ে যেন মাটি সরে যায়। সে তো তাদের ভালোবাসায় কোন খামতি রাখেনি, তাহলে এইরকম কেন হল! সৌমর বাঁচার ইচ্ছা যেন শেষ হয়ে গেছে, সে মরতে চায়। তাই ঐশীকে ভুলতে  নেশায় ডুবতে চায়।


সৌম ওর বন্ধুদের কাছে যায় সমস্ত কিছু বলে। হঠাৎ এক বন্ধু একটা মদের বোতল সৌমকে দেয়, আর বলে যে ওটা খেলে সবকিছু নাকি ভুলে থাকা যায়। সৌম মদ খেতে যায়, কিন্তু গন্ধটা যেন সহ্য হয় না। সৌম মদের বোতলটা ফেলে দেয়। সৌম ওখান দিয়ে চলে যায়। সৌম ওকে ভুলতে চায় কিন্তু নেশা যেন ওর রক্তে নেই। তাহলে ওকি করবে! সৌম্য নিজের জীবনটা শেষ করতে চায়। সৌম্য সাঁতার জানে না, ভাবল গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেবে, হারিয়ে যাবে স্রোতের টানে। ঠিক সৌম্য যখন ঝাপ দিতে যাবে, হঠাৎ তখনই একটি পাঁচ-ছয় বছরের শিশু সৌমর জামায় টান দিয়ে করুনার স্বরে বলল, "দাদা, খুব খিদে পেয়েছে… একটু খাবার দেবে!"

কথাটা শুনে সৌম দাঁড়িয়ে গেল। দেখলো শিশুটির অপুষ্ট শরীরে পরিহিত জামাটির প্রত্যেকটি ছেঁড়া অংশ থেকে দারিদ্রতার মুখ বেরিয়ে আসছে। ও এখন কি করতে যাচ্ছিল! যারা অনবরত দারিদ্রতা এবং দুঃখের সাথে লড়াই করছে, তাদের কাছে ওর দুঃখ কিছুই না। সৌম আবার নতুন করে বাঁচতে চায়। সৌম নিজের মনকে শক্ত করে। সে ওদের জন্য কিছু করতে চায়। সৌমকে যারা এত বড়ো করেছে যে, ওর পাশে থেকেছে,  তাদের জন্যে বাঁচতে চায়। সে আবার  সেই প্রাণবন্ত সৌম হয়ে উঠতে চাই। সে দেখিয়ে দিতে চায় খারাপ পথে না গিয়েও, আবার নতুন করে বাঁচা যায়। হয়তো পুরোপুরি ভাবে ঐশীকে ভুলতে পারবো না, কিন্তু এক নতুন জীবন বাঁচবে। হয়তো ঐশী' ই ওর যোগ্য ছিল না। আবার হয়তো কেউ আসবে নতুন করে নতুন ভাবে, তখন আবার দেখা যাবে। ততদিন নয় আগের মতোই চলুক।



এইরকম কাউকে দেখলে তার পাশে দাঁড়াও তাকে সহযোগিতা করো। নতুন পথে নিয়ে আসো, নতুন করে বাঁচতে শেখাও।

Comments

Post a Comment

সর্বকালের সেরা