খোলা আড্ডায়, চন্দ্রোদয় পাল।
"আজকের মত ভিজে নাও অভিষেক,
কাল তো আবার পার্টি অফিস, ক্লান্তির বাস রুট আর অচেনা মানুষের চেনা অভিযোগ।
কলকাতার এই ছোট্টো ঝড়ে উড়ে যায় খড়কুটো, আমার অভিমান, আর তোমার পি এইচ ডি টা।
পুরুলিয়ায় ছোট্টো গ্রামে তুমি শাল জড়ালে আমারও কেমন শীত শীত লাগে, চিৎকার পায়, নূপুর পরতে ইচ্ছে করে।
ভোট ম্যানিফেস্টো সুখের কথা বলে না কেন অভিষেক?"
আলিমুদ্দিন ও তেনারা।
চন্দ্রোদয় ২০১৯
" আমার কাছে যেটা হাসির, সেটা আমার কাছে ফানি.." হাতে মাইক, মঞ্চে উঠলে হাসির জোয়ার, তখন তাকে আর থামায় কে! বাখরাহাট থেকে কলকাতায় আসা একটি ছেলে, স্ট্যান্ড আপ কমেডি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে। বর্তমানে সে একজন সফল চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক, চন্দ্রোদয় পাল । কেমন ছিল তার এই জার্নি? শোনালেন চন্দ্রোদয় পাল।
প্রশ্ন- ছোট বেলা থেকে সব বাবা মায়ের মত অনুযায়ী, তাদের ছেলে মেয়েরা সায়েন্স নিয়ে পড়বে এবং ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিন্তু তুমি স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে বেছে নিলে, তা কোনো প্রবলেম হইনি?
চন্দ্রোদয় পাল- হ্যাঁ প্রবলেম তো হয়েছে; শুরুর দিকে একটু প্রবলেম হয়েছে। আসলে অফ বিট কেরিয়ার বেছে নেওয়া নিয়ে যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমনটা হয় আর কি। আমার বাবা মা খুব সাপোর্টিভ। মা কখনও কিছুতে আটকানোর চেষ্টা করেনি। আসলে আমার বাবার একটা মিষ্টির দোকান আছে বাখরাহাটে, একশো বছরের একটি গল্প জড়িয়ে আছে ওই দোকানটির সাথে, ফ্যামিলি বিজনেস টাই তাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপর,যেটা হয়েছিল কলেজে পড়তে পড়তে আমি রেডিও মিরচির একটি ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাই। তো এটা করতে করতে আমি দেখলাম যে আমি এটাতেই খুব মজা পাচ্ছি। যেহেতু আমি এটা কলেজ থেকে করতে শুরু করেছি, তাই বাবা-মা ধাতস্থ হয়ে গিয়েছিল এটার সঙ্গে। এখন বাবা মা এটা বুঝে গেছে, যে কোন কোন মাসে প্রচুর আনন্দে ছেলে, আর কোনো কোনো মাসে স্রেফ হারিয়ে যায়। এখন ব্যাপারটা সামলে গেছে; তবে, শুরুর দিকটা একটু সমস্যা হয়েছিল।
প্রশ্ন- প্রফেশনালি স্ট্যান্ড আপ কমেডি তে প্রবেশ কিভাবে?
চন্দ্রোদয় পাল- স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে যেটা করতে হয় সেটা হলো ওপেন মাইক। ভারতবর্ষের যে কোন শহর তথা কলকাতায় প্রচুর ওপেন মাইক হয়। ওপেন মাইক এটেন্ড করে স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে ঢুকতে হয়। তো স্ট্যান্ড আপের প্রাথমিক শর্ত ওটাই। ওপেন মাইকে মিনিট তিনেকের মত কথা বলতে দেয় এবং সেই তিন মিনিটের একটি স্লট দেয় এবং প্রথম দিনই সবাই ভাবে তিন মিনিটে একদম ফাটিয়ে দেবো, যে সবাই প্রচুর হাসবে, কিন্তু ওটা হয় না। নিজের ভাবা কনটেন্ট অচেনা লোককে হাসিয়ে দিচ্ছে, এটা বিরাট বড়ো পাওয়া।প্রথম মাস তিনেক একটু একটু প্রবলেম হয়েছে। সিনিয়ারা ধরিয়ে দিয়েছে । রেগুলার ওপেন মাইক করাই হল এই প্রফেশনে ঢোকার একমাত্র রাস্তা।
![]() |
স্ট্যান্ড আপ কমেডি: ওপেন মাইকে, চন্দ্রোদয় পাল। |
প্রশ্ন- আমরা দেখেছি 'হইচই অরিজিনাল স্ট্যান্ড আপ' এ তোমাকে পারফর্ম করতে, তো ঐখানে সুযোগ পেলে কি করে?
চন্দ্রোদয় পাল- অর্ঘ দা (SVF) আমার স্ট্যান্ড আপ কমেডি দেখেছিল এবং ম্যাডের সৌম্য আমার পরিচিত, ওর কাছ থেকে ওঁরা (হইচইটিম) খুঁজে পেয়েছিল, যে কলকাতায় স্ট্যান্ড আপ হচ্ছে,তখন ওরা আমার সাথে ও যশরুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দীপাংশু দা অভিয়াসলি বহু আগে থাকতে প্রচন্ড চেনা নাম।
প্রশ্ন- স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে ভারতবর্ষের অন্যান্য শহরের তুলনায় তুমি কলকাতাকে কিভাবে দেখছো?
চন্দ্রোদয় পাল- কলকাতায় লেখাটা অনেক এগিয়ে। স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে যেটা হয়, যেকোনো কমেডিয়ান এর লেখা আর বলার ধরনটা তো আলাদা হয়। আমি যেমন অবজারভেশনাল কমেডি করি, চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে খিল্লি করি। তো আমার ইন্টারভিউ দেখে যদি চারটায় হাসির কথা আসে, তাহলে আমি সেটা নিয়েই স্টেজে উঠবো। জাকির খানের মতো মানুষ যেমন স্টোরি টেলিং কমেডি করে। এইযে টাইপস অফ কমেডি এখানে কলকাতা অনেক এগিয়ে, সেই তুলনায় মুম্বাই,দিল্লি অনেক পিছিয়ে। মুম্বাইতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি প্রোগ্রেস করছে, তার কারণ হলো অপরচুনিটিস্ অনেক বেশি। যেহেতু অনেক রাজ্যের ফিল্টার গিয়ে মুম্বাই বা দিল্লি তে পরে। সেহেতু ওখানকার অডিয়েন্স অনেকটা ডিফারেন্ট অডিয়েন্স। আমি কলকাতার একই ক্যাফেতে গিয়ে একই জোকস কয়েকশো বার পারফর্ম করেছি। আমি একদিন একই জোকস শুনিয়ে যে দর্শককে হাসালাম পরের দিন সেই একই জোকসে সেই দর্শককে হাসানোটা একটু চাপের ব্যাপার হয়ে যায়। সেটা কলকাতা খুব সাকসেসফুলি করছে। কলকাতায় এখন ওপেন মাইকস্ -এ যে ক্রাউডটা হয় সেটা ম্যাক্সিমামই মারোয়ারি ক্রাউড, তাদের বাংলা কমেডি নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। তবু চেষ্টা চলছে , দীপাংশু দা করছে, সায়ন দা করছে , আমিও একটা টাইম পর্যন্ত করেছি। এখন আমি একটু সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ এর লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছি।তবে মুম্বাই থেকে কলকাতা এগোচ্ছে না, এটা ঠিক কারণ ওরা আমাদের পপুলারিটিতে জাস্ট হারিয়ে দিচ্ছে।
প্রশ্ন- এবার একটু আমরা ওয়েব সিরিজের কাজে চলে আসি। 'দা বিগ বং কানেকশন' যেটা তুমি লিখেছো এর সঙ্গে যোগাযোগ কিভাবে ?
চন্দ্রোদয় পাল- সপ্তর্ষি মজুমদার যে হচ্ছে বিগ বং কানেকশন এর ডিরেক্টর সে হচ্ছে আমার খুব কাছের বন্ধু। আমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল আড্ডা টাইমসের একটা সিরিজ হয়েছিল 'ঘোস্তানা' বলে।তার মধ্যে যেটা হয়েছিল মূলগল্পটা একজন লিখেছিল । সেখানে ডায়লগ আর স্ক্রীন-প্লে টা সে করেনি। সেখানে আমি এসে করেছিলাম। তখন সেটা ওদের খুব ভালো লাগে। তো তখন মজো প্রোডাকশন্সে ও অ্যাক্রপলিস ইন্টারটেইনমেন্ট সনি লিভ (sony liv) এর জন্য একটা ওয়েব সিরিজ করতে চাইছিল। তখন সপ্তর্ষি দার ওটা ডিরেক্ট করার কথা হয়। তখন সপ্তর্ষি দা ওটা আমাকে লেখার কথা বলে এবং আমরা দুজনে মিলে ডেভেলপ করি।
প্রশ্ন- এবার চলে আসি 'কেক ওয়াক'। এটা তোমার তো একটা টার্নিং পয়েন্ট ফিল্ম। কলকাতায় বসে তুমি কি শর্ট ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখছো । তুই এটা কি ভাবে?
চন্দ্রোদয় পাল- রাম দা (রাম কমল মুখার্জী) মুম্বাইতে থাকা একজন খুবই বাঙালি লোক। যদিও আমার প্রাথমিক আলাপ রাম দা এর সঙ্গে নয়। আমার আলাপ অভ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে ছবিটির কো-ডিরেক্টর। অভ্র দার সঙ্গে আমার আলাপ আড্ডা টাইমসের থেকে। প্রাথমিক গল্পটা রাম দার লেখা, স্ক্রিন প্লে আর ডায়লগটা আমার আর রামদার লেখা। অভ্রদারও প্রচুর অবদান লেখায়।
প্রশ্ন- বর্তমানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিম,ট্রল ,প্যারোডি -র হচ্ছে, তো এটা নিয়ে তোমার কি মতামত?
চন্দ্রোদয় পাল - এটা একান্তই আমার নিজের কথা ,আমার যদি কোন কিছু দেখে বা শুনে বা বুঝে হাসি পায় তাহলে সেটা আমার কাছে ফানি। সেটা দ্বিতীয় আর একজন মানুষের কাছে নাও হতে পারে।কিন্তু এটা আমার কাছে ফানি, তো আমি বিশ্বাস করি যে ওই ডেমোক্রেটিক রাইটটা থাকা উচিত যে আমার এতে তে হাসি পায়, আর আমি এটাতে হাসলাম। তো আমার ট্রলিং নিয়ে কোনো আপত্তি নেই ।
প্রশ্ন- স্ট্যান্ড আপ কমেডি তে তোমার অনুপ্রেরণা কে?
চন্দ্রোদয় পাল -তিনটে লোক। ১.সৌরভ ঘোষ , সৌরভ দা একটা সময় কলকাতার কমেডিয়ানদের রোজ ওপেন মাইক করতে শিখিয়েছিল।
২. মুম্বাইয়ের বিশ্ব কল্যাণ রাথ।
৩. অভিজিৎ গাঙ্গুলী। অভিজিৎ গাঙ্গুলির ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য অনুপ্রেরণা থেকেও বেশি আমি অভিজিৎ দা কে দাদা হিসাবে পেয়েছি।
প্রশ্ন-'ভবিষ্যতের ভূত' সিনেমা নিয়ে এত কান্ড ঘটলো তো এটা নিয়ে তোমার কি মতামত?
চন্দ্রোদয় পাল- একদমই অনৈতিক একটি কাজ।এটা সরকারি স্তরেই হয়ে থাকুক বা বেসরকারি স্তরেই হয়ে থাকুক,একটি ভুল কাজ। এটা গণতন্ত্রের জায়গা আমাকে বলতে দিতে হবে। যে কোন শাসক দলের উচিত বিরোধীরা কি বলছে সেটা শোনা। তবে 'ভবিষ্যতের ভূত' নিয়ে যেটি হল, সেটা আমাকে খুবই অস্বস্তি দিয়েছে।
প্রশ্ন- খুব শিগগিরই গণতন্ত্র প্রয়োগ এর দিন আসছে তো এই ব্যাপারে তোমার কি মনে হয়?
চন্দ্রোদয় পাল- ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তাদেরকে ভোট নয়।কারণ তাদেরকে জেতালে কিছুদিন পর গণতন্ত্র প্রয়োগের সুযোগ টাই পাবো না। যে সরকার একজন সাংবাদিক কে বাঁচাতে পারে না, সে খুন হলে কোন প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদেরকে আর ভোট নয়। এই ইলেকশন টা খুব ইম্পরট্যান্ট।
প্রশ্ন-চার্লি চ্যাপলিন না মিস্টার বিন?
চন্দ্রোদয় পাল- চ্যাপলিন।
প্রশ্ন- ভানু বন্দোপাধ্যায় না রবি ঘোষ?
চন্দ্রোদয় পাল- রবি ঘোষ।
প্রশ্ন-রুদ্রনীল ঘোষ না কাঞ্চন মল্লিক?
চন্দ্রোদয় পাল- রুদ্রনীল ঘোষ।
প্রশ্ন-ইলিশ না চিংড়ি?
চন্দ্রোদয় পাল- ইলিশ।
প্রশ্ন-মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল?
চন্দ্রোদয় পাল - আমি চরম মোহনবাগান ভক্ত, কিন্তু ইলিশ পছন্দ করি।
প্রশ্ন- নিজেকে কোনটা বলতে ভালোবাসো স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান না স্ক্রিপ্ট রাইটার?
চন্দ্রোদয় পাল- দুটোই। আমি দুটোই খুব আনন্দের সাথে করি।
ভোঁদাই অফিশিয়াল- ধন্যবাদ। এবং পরবর্তী প্রজেক্টগুলোর জন্য শুভেচ্ছা।
(এরপর চলল আমাদের খাওয়া-দাওয়া পর্ব, এবং বহু বিষয় নিয়ে খোলামেলা আড্ডা)
Comments
Post a Comment