ছেলেবেলার ডায়েরি: সাইকেল
বুধবার, 7ই নভেম্বর, ২০১৮:
দুই বছর আগে, প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে বেড়োতাম সাইকেল নিয়ে। ঘড়ির কাটায় ঠিক চারটে বাজবে, তখন আমার একটাই ডায়লগ ছিল, “মা আসছি” বলে হাঁক পারা। তখন এক কানে শুনতে পারতাম মা বলছে, “তাড়াতাড়ি আসিস”; আর আরেক কান সজাগ থাকত বন্ধুর হাঁক-এর জন্য। একবার যদি বন্ধুদের ডাক শুনতে পেতাম, আর দেখে কে আমায়! মায়ের বলা ‘তাড়াতাড়ি আসিস’ শব্দ গুলো কানের পর্দার ওপারেই থেকে যেত, এপারে আসতো না। আর কোনোভাবে এসে গেলে দরজায় লেখা থাকতো, 'কোন আদেশ, উপদেশ মূলক কথার প্রবেশ সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ'। এই দেখে মায়ের বলা শব্দগুলো ব্যর্থ দূতের মতো ফিরে যেত। সবাই মিলে সাইকেল নিয়ে যেতাম হাম্পিদার বাড়িতে, সেখান থেকেই সাইকেলে যাত্রা শুরু। হাম্পিদা আমাদের থেকে অনেক বড়। কিন্তু বলা বাহুল্য আমাদের সাথে বেড়োলে সেও কখন ছোট হয়ে যেত, সেটা জানা তার নিজের গোচরের বাইরে থাকত। কোনদিন দক্ষিণেশ্বর-আদ্যাপীঠ, কোনদিন গিরিশ পার্ক-মহত্মা গান্ধী রোড, আবার কোনদিন বেলুড় মঠ প্রায়ই চলত এরকম রহস্য উন্মোচন, যাকে বলে এডভেঞ্চার। অ্যাডভেঞ্চার তাও আবার সাসপেন্ড থাকবে না, তা কখনো হয়! পুলিশের কাছে কেস খাওয়া, সাইকেলের চাবি হারিয়ে যাওয়া, সাইকেল নিয়ে পরে যাওয়া, বাড়ি ফিরে বাবা-মায়ের কাছে ক্যালানি খাওয়া ইত্যাদি ঘটনা প্রায়ই চলত, তার উপর চলত আমাদের নতুন নতুন বাহানা। সবমিলিয়ে রীতিমতো আয়োজন করতে হতো পুরো পরিকল্পনার। যেন কাশের বন পেরিয়ে অপুর প্রথম রেলগাড়ি দেখতে যাওয়া। এই সুদীর্ঘ যাত্রায় সবাই ছিল পথপ্রদর্শক, পাছে কেউ পথ হারিয়ে না ফেলে। ঠিক যেমন পর্তুগিজ ডিয়েগো অ্যালভারেজ্ শংকরকে পথ দেখিয়েছিল ঠিক তেমন। ছটা-সাড়ে ছটার মধ্যে বাড়ি ফিরতাম, ক্লান্ত পথিকের মতো। হয়তো ক্লান্ত বলেই এই ফাঁকে একটু বিশ্রাম করে নিচ্ছে সাইকেলটা, মনে মনে বলছে, "কাল আবার কতদূর না যেতে হবে"!
আজ সেই স্মৃতিগুলো নিজের ইতিহাসেই বন্দি। ফেসবুক যুগে মানুষই বন্দি, আর স্মৃতিগুলো’তো নিমিত্ত মাত্র। মাঝে মাঝে একে-অন্যকে এইসব গল্প বলার সময়, সেই পুরনো স্মৃতিগুলো যেন স্বাধীনতার স্বাদ পায়। সবাই হয়তো নিত্য কাজের সঙ্গী, জীর্ণ দেহে আজ শুধুই বিশ্রাম করে আমাদের সাইকেলগুলো।
বিষান ব্রহ্ম।
বিষান ব্রহ্ম।
Sotti darun lekha eita
ReplyDeleteধন্যবাদ
Delete